Description
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে বলেছেন, ‘আমি মানব-দানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য। ‘ আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করাই মানুষের একমাত্র কাজ। এ ছাড়া মানুষের মৌলিক অন্য কোনো কাজ নেই। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ইবাদতই যদি আমাদের একমাত্র কাজ হয়, তাহলে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য-চাকরি করি কেন? কৃষি-খামার করি কেন? সংসারের কাজ করি কেন? খানা-পিনা, পেশাব-পায়খানা ইত্যাদি করি কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর সহজে বোঝার জন্য একটি উদাহরণ পেশ করছি।
এই মাহফিলের আয়োজন একমাত্র ওয়াজের জন্য। তাহলে মাইক কেন? বিছানা কেন? শামিয়ানা কেন? মঞ্চ কেন? এগুলো ওয়াজের সুবিধার জন্য। যদি ওয়াজ ঠিকমতো হয় তাহলে একাজগুলো স্বার্থক হবে। পক্ষান্তরে শামিয়ানা টানানো হলো, বিছানা বিছানো হলো, মাইক ফিট করা হলো, বক্তাও দাওয়াত করা হলো, শুধু ওয়াজ করা হলো না, তাহলেও একাজগুলো অনর্থক প্রমাণিত হবে। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা শুধু ইবাদত করার জন্যই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। খাওয়া-দাওয়া করি, ঘুমাই, পেশাব-পায়খানা করি ইবাদতের সুবিধার জন্য। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরিও করে থাকি ইবাদতের সুবিধার জন্য। এ রকম মুসলমানের সংখ্যা বাংলাদেশে বেশি, যারা জানে না, দুনিয়াতে কেন তারা এসেছে? তাদের মূল কাজ কোনটি? তারা জানে না, জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সঠিক রাস্তা কোনটি? জীবনের উদ্দেশ্য ছিল একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, তা তারা ভুলে গেছে। যেগুলো আনুষঙ্গিক কাজ ছিল, সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন মানুষ আর জন্তু-জানোয়ারের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। দেখুন, মহিষও খায়, বলদও খায়, গাধাও ঘুমায়, কুকুরও বাচ্ছা জন্ম দেয়। মানুষও একাজগুলো করে থাকে। তাহলে মানুষ আর ওই জানোয়ারগুলোর মধ্যে পার্থক্য কোথায়? পার্থক্য হলো একমাত্র ইবাদত। বলদে নামাজ পড়ে না। গাধা রোজা রাখে না। কুকুর হজে যায় না। এর দ্বারা প্রমাণ হয়, বলদ, গাধা, কুকুর তথা জন্তু-জানোয়ার আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য নিশ্চিত হয় ইবাদতের মাধ্যমে। কাজেই যে মানুষের জীবনে ইবাদত ঠিক আছে, বাকি সংসারের কাজকর্ম ইবাদতের সুবিধার জন্য করে, সে মানুষ সংসারের কাজকর্ম করেও ইবাদতের সওয়াব পায়। এর সহজ উদাহরণ হলো হাদিস শরিফে রাসুলে কারিম মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে ঘুমাল সে অর্ধরাত পর্যন্ত ইবাদত করার সওয়াব পাবে। এমনিভাবে যে ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল, সে বাকি অর্ধরাত ইবাদত করার সওয়াব পাবে। ওই ব্যক্তি সারা রাত ঘুমিয়ে ইবাদতের সওয়াব পেল কেন? এশা ও ফজরের নামাজ পড়ার কারণে। যার মূল ইবাদত ঠিক থাকে, তার সাংসারিক কাজও ইবাদত হয়ে যায়। যে ব্যক্তি এশার নামাজ পড়ার দরকার মনে করল না, ঘুমিয়ে গেল এবং ঘুম থেকে ওঠার পর ফজরের নামাজ পড়ার প্রয়োজন মনে করল না, খানা-পিনার চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল, তার ঘুম আর গাধার ঘুমের পার্থক্য প্রমাণ করে একমাত্র ইবাদত। এই ইবাদত করার জন্যই আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। ইবাদতই আমাদের জীবনের মূল কাজ। ইবাদত নিজে নিজে শেখা যায় না, নিজে নিজে করাও যায় না।
ইবাদত-বন্দেগি শিখতেও ওস্তাদ লাগে, ইবাদতের অভ্যাস করতেও ওস্তাদ লাগে। ইবাদতের নিয়মকানুন যিনি শিক্ষা দেন, তাঁকে ধর্মীয় পরিভাষায় ওস্তাদ বলা হয়। ইবাদতের অভ্যাস যিনি করিয়ে দেন, তাঁকে আমাদের পরিভাষায় পীর সাহেব বলা হয়। ওস্তাদ ছাড়া যেমন ইবাদতের নিয়মকানুন শেখা যায় না, তেমনি পীর সাহেবের সান্নিধ্য ছাড়া ইবাদতের অভ্যাস গড়ে ওঠে না। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে ইমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো। সত্যবাদীদের সংশ্রব অবলম্বন করো। ‘ সত্যবাদী কারা এবং সংশ্রব অবলম্বন করার দরকার কেন? এ প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসিররা বলেছেন, সব মুসলমান কালিমায় বিশ্বাস করে মুসলমান হয়েছে। কালিমা বিশ্বাস করে পালন করলে সত্যবাদী আর পালন না করলে মিথ্যাবাদী। এ কথা ভালোভাবে বোঝার জন্য লক্ষ্য করুন, কালিমার প্রথম অংশ- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুর অর্থ হলো এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। অর্থাৎ ঘোষণা করা হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। অন্য কারো ইবাদত করা যাবে না। কিন্তু কালিমা পাঠকারী নিজেই যদি এক আল্লাহর ইবাদত না করে, তাহলে সে কালিমায় মিথ্যাবাদী। এ রকম কালিমায় মিথ্যাবাদী মুসলমান বাংলাদেশে অনেক আছে। কালিমার দ্বিতীয় অংশের অর্থ হলো হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। কালিমার প্রথম অংশে ঘোষণা করা হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। আর দ্বিতীয় অংশে ঘোষণা করা হচ্ছে ইবাদত মনগড়া নয়, রাসুলের তরিকা অনুযায়ী করতে হবে। যে লোক ইবাদতই করে না কিংবা ইবাদত করলেও রাসুলের তরিকা মতে করে না, সে অবশ্যই মিথ্যাবাদী। সত্যবাদী হতে হলে উভয়টি পালন করতে হবে। যারা কালিমা পড়ে রাসুলুল্লাহর তরিকা মতো আমল করে, তারা সত্যবাদী আল্লাহওয়ালা মানুষ। তাদের সাহচর্য লাভ করতে আল্লাহ তায়ালা আদেশ করেছেন। নিজের ভাষায় বলেছেন, ‘তাদের সঙ্গলাভ করো। তাদের সাথে ওঠা-বসা করো। সময় লাগাও। ‘ আমাদের দেশের ভাষায়, এই নির্দেশের সহজ মর্ম হলো, হাক্কানি পীর সাহেবদের সংশ্রব অবলম্বন করো। চিল্লাকাশি করো। কেননা পীর সাহেব কালিমার মিথ্যাবাদী হতে পারেন না। আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গলাভ করার দ্বারা আল্লাহওয়ালা হওয়া যায়। এ মর্মে রাসুলে কারিম (সা.) দুটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। একটি আতরের দোকান, আরেকটি কামারের দোকান দিয়ে। সুনানে আবু দাউদ শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহওয়ালাদের সংশ্রব গ্রহণকারী ব্যক্তি আতরের দোকানদারের ন্যায়। তুমি যদি আতরের দোকানে যাও এবং সেখানে গিয়ে বসে থাক, নিজের পয়সা খরচ করে আতর না কিনো এবং দোকানিও তোমাকে ফ্রি কিছু আতর না দেয়, তবুও বাতাসে আতরের ঘ্রাণ তোমার নাকে এসে লাগবে। পক্ষান্তরে খারাপ ব্যক্তির সঙ্গলাভকারীর দৃষ্টান্ত হলো- কামারের দোকানের ন্যায়। সেখানে বসে থাকলে কালি ও ময়লা না লাগলেও ধোঁয়া তো অবশ্যই লাগবে। সুতরাং নিজে নিজে যেমন শেখা যায় না, তেমনি নিজে নিজে আল্লাহওয়ালাও হওয়া যায় না। শিখতে লাগে ওস্তাদ আর আল্লাহওয়ালা হতে লাগে আরেকজন আল্লাহওয়ালা। এটি শতকরা ১০০ জনের বেলায়ই প্রযোজ্য। কেউ যদি বলেন, ১০০ জনের মধ্যে একজন শিক্ষক ছাড়া শিক্ষিত হয়ে গেছে। তাহলে তা কিছুতেই সত্য বলে আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। কিছু শিখতে অবশ্যই শিক্ষক লাগে। ১০০ জনের মধ্যে একজন আল্লাহওয়ালার সান্নিধ্য ছাড়া আল্লাহওয়ালা বনে গেছে, এটাও হতে পারে না। তাই আল্লাহ তায়ালা আমাদের যে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন, সে ইবাদত শিক্ষা করার জন্য শিক্ষকের দরকার এবং সে ইবাদতের অভ্যাস গড়ার জন্য প্রত্যেকের একজন আল্লাহওয়ালার সাহচর্য দরকার। আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্যের মাধ্যমেই কেবল আল্লাহওয়ালা হওয়া যায়।
Reviews
There are no reviews yet.