জ্ঞান অন্নেষণ, সমাজ পরিবর্তন

বাংলা উচ্চারণ দেখে কুরআন তিলাওয়াত………একটু সতর্ক হই !

বাংলা উচ্চারণ দেখে কুরআন পড়লে ভয়ানক অর্থ বিপর্যয় ঘটে।যেমন, যেখানে আয়াতের অর্থ হবে “বল, আল্লাহ এক’, সেখানে  বাংলা  উচ্চারনে পড়লে অর্থ হয়ে যায় এক আল্লাহকে খেয়ে ফেলো (নাউজুবিল্লাহ)। বর্তমান সময়ে উচ্চারণ সহ কুরআন প্রচুর পরিমানে কিনতে দেখা যায় মুসলমানদেরকে। এটা এই উম্মতের জন্য বড় একটি দুঃসংবাদও  বটে।এত বেশি  উচ্চারণ সহ কুরআন সেল হওয়ার পিছনে এটাও একটা কারন যে মুসলমানদের মধ্যে বড় একটি অংশ সহীহ শুদ্ধ করে নাজেরা তিলাওয়াত করতে পারে না।

যারা উচ্চারণ সহ কুরআন কেনেন বা পড়েন তাদের অনেকের বক্তব্য হলো, নাজেরা পড়তে পারি কিন্তু কোথাও  আটকে গেলে তখন উচ্চারণ দেখে পড়া চালিয়ে যাওয়া যায়। এজন্যই উচ্চারণ সহ কুরআন কিনেছি। এটা সঠিক পদ্ধতি হতে পারে না। আটকে  যাওয়া মানে হলো আপনার পড়াটা এখনো  পাকা হয়নি। এখন আপনার কাজ হলো নাজেরা পড়ার আগে পড়াটা উস্তাদের অধীনে থেকে চালু করে নেওয়া।ভুল হলে উস্তাদ শুদ্ধ করে দেবেন।  এই প্রক্রিয়া চলবে যতক্ষণ না পর্যন্ত  নাজেরা পড়ার উপযুক্ত হয়ে যান। পড়া না পারলে উচ্চারণ দেখে পড়া চালিয়ে যাওয়াতো আল্লাহ পাক জরুরী করে দেন নি। বরং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ঠেকে ঠেকে পড়ে  তার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব। একটি হলো তিলাওয়াতের আরেকটি হলো ঠেকে ঠেকে কষ্ট করে পড়ার।

তো, তিলাওয়াতের দ্বারা আমাদের উদ্দেশ্য তো সাওয়াব লাভ করা, আল্লাহর মহব্বত লাভ করা। সেটা ঠেকে ঠেকে কষ্ট করে উস্তাদের কাছে পড়ার দ্বারাই হাসিল হয়ে যাচ্ছে। উচ্চারণ দেখে দ্রুত পড়ার দ্বারা কোন ফজিলত নেই, নেকি নেই, আল্লাহর ভালোবাসা লাভের ওয়াদা নেই। বরং আছে ভয়ানক রকম গোনাহ। আল্লাহর কালামকে বিকৃত উচ্চারণে পড়ার মত পাপ। কি দরকার অযথা এই পাপে জড়ানোর। তারচেয়ে ধীরে ধীরে আগাই। অল্প অল্প করে তিলাওয়াত শিখি উস্তাদের কাছে। এটাই সঠিক পন্থা।

অনেকের  কাছে মূল সমস্যা হলো উস্তাদের কাছে পড়া, সরাসরি উস্তাদের কাছ থেকে তিলাওয়াত শেখা। কিছু প্রতিবন্ধকতা অবশ্যই আছে। আমরা যারা জেনারেল লাইনের, মাদ্রাসায় পড়ার সুযোগ হয়নি, এমনকি ছোটবেলায় মক্তবে যাওয়ার সুযোগও হয়নি। এখন বড় হয়ে দ্বীনের বুঝ এসেছে, তিলাওয়াত করতে মনে চায়। কিন্তু শিখবো কার থেকে।ভালো হুজুর পাবো কোথায়? কার কাছে শিখবো লোক খুঁজে পাই না। কাউকে পেলে অনেক কারনে পছন্দ হয় না। আবার নিজের দুনিয়াবি ব্যস্ততার কারনে হুজুরের সময়ের সাথে নিজের সময়ের মিল করতে পারি না। আরো একটা বড় সমস্যা হলো সংকোচবোধ। বড় হয়ে গিয়েছি। অফিসে আদালতে জব করি। এখন হুজুরের সামনে কায়দা নিয়ে বসতে লজ্জা লাগে। নিজের ত্রুটি প্রকাশ করতে মন চায় না। অন্য লোকে জেনে ফেলবে যে আমি এত বড় হয়েছি কিন্তু কুরআন পড়তে পারি না। বা অন্যদের সামনে কায়দা নিয়ে বসলে তারাও কি মনে করবে ? এত বড় ধামড়া হয়েছে অথচ এখনো কায়দা পড়ে ! আর কারো কারো মনে কাজ করে অহংবোধ। হুজুরের কাছে যেতে হবে কেন ? তার সামনে বাচ্চাদের মত বসতে হবে কেন ? আমি ধনে জনে পদে এত বড় মানুষ, আমি কি করে এখন এই বয়সে কুরআন শিখতে হুজুরদের সামনে বসি? আমাকে এভাবে মানায় না।

এই নানান কিসিমের অসুবিধার কারনে আমরা অনেকেই তিলাওয়াত শিখি না। শেষে একটাই পথ বাকি থাকে। এক খানা উচ্চারণ সহ কুরআন কিনে তারপর বিভিন্ন অকেশনে একটু আধটু পড়ি। কিন্তু বাস্তব কথা হলো, এভাবে উচ্চারণ দেখে কুরআন পড়ে একটুও স্বাদ পাওয়া যায় না। আর খারাপ দিক গুলো তো আছেই।

সমাধান কি ? উস্তাদের কাছে পড়া শেখা ছাড়া উপায় নেই। মন থেকে তালাশ করলে অবশ্যই আল্লাহ সহীহ শুদ্ধ করে তিলাওয়াত শেখার একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করে দেবেন। সব সংকোচ ঝেড়ে ফেলে কুরআন তিলাওয়াত শেখার পথে আমাদেরকে অগ্রসর হতেই হবে। কুরআন শেখা ছাড়া, কুরআন এর সাথে যেকোনো ভাবে সম্পৃক্ত থাকা ছাড়া আমাদের বাঁচার আর কোন রাস্তা নেই।